রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইয়ামান কি আসলে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য হুমকি ? ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট ও জড়িত জাহাজে ইয়ামানীদের হামলার কারণে আসলেই কি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে ?
ইত্তেফাকের খবর :
" হুথি লক্ষ্য বস্তুতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলার পর শান্ত থাকার আহ্বান চীনের। "এ খবরের এক অংশে এসেছে :
" হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইরান সমর্থিত হুথি বাহিনী লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে লাগাতার হামলা চালিয়ে আসছিল। এতে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ে বিশ্ববাণিজ্য। বৈশ্বিক ক্ষতি বন্ধে বাধ্য হয়ে শুক্রবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। "
এতদসংক্রান্ত মন্তব্য :
ইয়ামান কি আসলে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য হুমকি ?
ইয়ামান কেবল ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ সমূহের হামলা করছে। ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা করে নি বা করছে না যার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়বে । আর এতে করে যদি বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়ে তাহলে তার জন্য দায়ী ইসরাইল , মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা ( যুক্তরাজ্য ) ও পশ্চিমা দেশগুলো। এ সব দেশের আস্কারা , সমর্থন ও সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়ে গাযায় ইসরাইল আগ্রাসন , গণহত্যা , প্রজন্ম হত্যা , যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে তিন মাসের অধিক কাল যাবৎ। বিশ্বব্যাপী নিন্দা এবং যুদ্ধ বন্ধের জোরালো আহ্বান ও দাবি সত্ত্বেও মাযুরা ,যুরা ও পশ্চিমাদের সবুজ সংকেতে এখনো ইসরাইল থামছে না । তাহলে এমতাবস্থায় বিশ্বের উচিত বল ও শক্তি প্রয়োগ করে ইসরাইলকে থামানো। কিন্তু সে কাজটা তো বিশ্বের সরকার ও রাষ্ট্রগুলো করছে না । বিশ্ব কি পারে না ইসরাইলকে সর্বাত্মক বয়কট করতে ইসরাইলের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য বন্ধ বা স্থগিত রাখতে ? ইয়ামান তো গাযায় ইসরাইলের আগ্রাসন , গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ ঠেকাতেই ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা করছে। বিশ্ব যদি ইয়ামানের মতো এ ধরণের ব্যবস্থা নিতে অপারগ হলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে বাধ্য এবং বিশ্বকে বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়তেই হবে। গাযায় আগ্রাসন , গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার গুলো যদি ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করে তাহলে তখন ইসরাইলী বাণিজ্যিক জাহাজ আটকানোর আর প্রয়োজন হবে ইয়ামানের । গাযায় ইসরাইল যা করছে তা কি অন্যায় , আগ্রাসন , গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ নয় ? ইসরাইল কর্তৃক ২৪০০০ এর অধিক ফিলিস্তিনি শিশু ও নারী পুরুষ হত্যা কি গণহত্যা নয় ? ৫৫০০০এর অধিক শিশু , নারী পুরুষকে আহত করা কি মানবতা বিরোধী অপরাধ নয় ?
তাহলে মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরা ( যুক্তরাজ্য ) তা বন্ধ না করে এবং যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলকে শাস্তি না দিয়ে ইয়ামানের ওপর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে !!! আসলে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) , যুরা (যুক্তরাজ্য) যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলের সকল অপকর্ম ও যুদ্ধাপরাধে শরীক এবং এক সমান অপরাধী। আর এখন ইয়ামান হামলা করে মাযুরা ও যুরা নিজেদেরকে আবারও আগ্রাসনকারী ও যুদ্ধাপরাধী প্রমাণ করল । আর এ হামলা ইয়ামানকে ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট জাহাজ আটকানোর সিদ্ধান্ত ও তৎপরতা থেকে মোটেও ক্ষান্ত ও বিরত করতে পারবে না । ইয়ামান ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাযুরা(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরার ( যুক্তরাজ্য ) পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন পুষ্ট সৌদি আমিরাতী জোটের ৮ বছর ব্যাপী যুদ্ধে অজস্র অসংখ্য বার এ ধরণের বোমাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে এবং এ সব হামলায় হাজার হাজার ( ৫০০০০ - ১৫০০০০ এর অধিক ) নিরীহ ইয়ামানী জনগণ শাহাদাত বরণ করেছেন । অথচ ৮ বছরের ঐ যুদ্ধে বীর ইয়ামানী মুজাহিদ জাতি বিজয়ী হয়েছেন। তাই মাযুরা ও যুরার এ ধরণের বোমাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইয়ামানীদের জন্য কিছুই নয় । ফার্সী ভাষায় একটি প্রবাদ ( যার্বুল মাসাল ) প্রচলিত আছে :
آزموده را آزمودن خطاست
( অযমুদে র অযমুদান খাথস্ত্ )
" পরীক্ষিত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা ভুল । " এত সব বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র
হামলায় বীর ইয়ামানী জাতি মোটেও কাবু হয় নি এবং পরাজিত হয় নি। তাই ইয়ামানের ওপর মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও যুরার ( যুক্তরাজ্য)যৌথ হামলার অর্থ হচ্ছে অযমুদেহ র অযমূদান খাথস্ত্ ( পরীক্ষিত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা ভুল ) ।
ইয়ামান অবশ্যই মাযুরা ও যুরার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবার অধিকার রাখে এবং উপযুক্ত সময় তা দেবে।
আর মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও যুরা (যুক্তরাজ্য ) এ পদক্ষেপের মাধ্যমে গাযা - ইসরাইল যুদ্ধকে সম্প্রসারিত করে তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধের রূপ দেওয়ারই চেষ্টা করছে । চীন সহ বিশ্বের অন্য সকল দেশের উচিত চাপ , বল ও শক্তি প্রয়োগ করে গাযায় আগ্রাসন , গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ থেকে ইসরাইল ও তার অপকর্ম , অন্যায় ও অপরাধের দোসর মাযুরা , যুরা ও পশ্চিমাদেরকে বিরত করা ও রাখা । তাহলে তখন বিশ্ব
বাণিজ্য আর ক্ষতির সম্মুখীন হবে না । আর সেই সাথে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে ইয়ামান বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য হুমকি ও ক্ষতির কারণ নয় । বরং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী ইসরাইল, মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা ( যুক্তরাজ্য ) ও পশ্চিমারাই বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষতি সাধন করছে ।
ইয়ামানের ওপর মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও যুরার ( যুক্তরাজ্য ) আক্রমণ প্রমাণ করল যে গাযা যুদ্ধে ইসরাইল আসলেই ব্যর্থ ও পর্যদুস্ত হয়েছে এবং ইয়ামান কর্তৃক ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ আটকানোর কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ক্ষতি নয় বরং ইসরাইলেরই ব্যাপক ও মারাত্মক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং হচ্ছে এবং এ জন্যই মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরা ( যুক্তরাজ্য ) ক্রুদ্ধ হয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ক্ষতি বন্ধের ছুতা তুলে আসলে ইসরাইলের বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই ইয়ামানের ওপর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে । হয়তো অনেক পশ্চিমা ঘেঁষা গর্দভ গোছের লোকেরা বিশ্বাস করবে যে "মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও যুরা ( যুক্তরাজ্য) বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ক্ষতি বন্ধে বাধ্য হয়ে শুক্রবার ভোরে ( ১২-১-২০২৪ ) হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়ামানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে"। কত বড় বিশ্ব দরদী মাযুরা ও যুরা !!!!!